শীবা বাশফোঁড়। দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বাবুপাড়া হরিজনপল্লিতে জন্মগ্রহণ করা এই যুবকের স্বপ্ন যেনো আকাশছোঁয়া। দলিত ঘরে জন্ম, শিশুকালে মা হারানো, বাবার ছন্নছাড়া জীবন, পরিবারে খাবার জোটাই যেখানে দুষ্কর সেখানে শীবা বর্তমানে চীনের ইয়াংঝু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রো ইলেকট্রনিকস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (স্নাতক) বিভাগের শিক্ষার্থী। নানা রকম বৈরী পরিবেশ পাড়ি দিয়ে আগামী শনিবার (২০ মে) শিক্ষাবৃত্তি নিয়েই তিনি চীনে পড়তে যাচ্ছেন। শিবার এই স্বপ্ন পূরণে বিভিন্নভাবে যাকে সহযোগিতা করেছেন সামাজিক সংগঠন সংযোগ কানেক্টিং পিপল ফাউন্ডেশন।
শীবার পারিবারিক সূত্র বলছে, তার বাবা রেলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। দুই ভাই হাটবাজার ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করেন। অভাবের কারণে দুই বোনকে কম বয়সে বিয়ে দিতে হয়েছে। শীবাও হাটে ঝাড়ু দেওয়া, নালা পরিষ্কারের কাজ করেছেন। এতোকিছুর পরেও শীবা
কীভাবে এগোচ্ছেন তার স্বপ্নের পথে? সেই গল্পই শুক্রবার দেশকথাকে শুনিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, জীবনসংগ্রামে ধাপে ধাপে এগোতে হয়েছে তাকে। পথে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে৷ তবে, কোন কিছুরই তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন মানুষ ও সংস্থার সহযোগিতায় এগিয়েছেন তিনি। শীবা পাশে পেয়েছেন স্থানীয় এনজিও গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র, সামাজিক সংগঠন সংযোগ কানেক্টিং পিপল ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিদের। বড় ভাই রতন বাশফোঁড়, মায়ের মতো বড় ভাবি রিতা রানী বাশফোঁড়, ছোট বোনের স্বামী পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুমন বাশফোঁড়, পার্বতীপুর পৌর মেয়র মো. আমজাদ হোসেন, গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের মাধ্যমে ছোটবেলায় পরিচয় হওয়া শামীমা আখতার, সুইজারল্যান্ডের নাগরিক পিয়েডার কাজুরাসহ একাধিক ব্যক্তির সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। চীনে যাওয়ার জন্য উড়োজাহাজের ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ যে কয়েক লাখ টাকা লাগবে, তা এই সংস্থা ও মানুষগুলোই সংগ্রহ করে দিয়েছেন। চীনে যাওয়ার আগের কয়েক দিন ঢাকায় থাকা-খাওয়া, চীনের আবহাওয়া অনুযায়ী কাপড় কেনাসহ স্যুটকেস গুছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন শামীমা আখতার।
এ বিষয়ে সামাজিক সংগঠন সংযোগ কানেক্টিং পিপল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ জামাল বলেন, গত ২৬ এপ্রিল শীবার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। শীবার হাতে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার একটি চেক তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে মানুষের সহায়তায়।
শীবার ছোট বোনের স্বামী সুমন বাশফোঁড় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন। তবে তিনি চান, শীবা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক। তাই অনলাইনে ক্লাস করার জন্য সুমন শীবাকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ল্যাপটপটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন শীবা। শীবার সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন সুমন। সুমন বললেন, দলিত কমিউনিটিকে টেনে তুলতে হলে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। শীবার মতো একজনও যদি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সে জন্যই সবাই মিলে শীবার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।