ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করে একাধিক পাসপোর্ট করার অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। সরকারি চাকরিজীবি হয়েও ওই শিক্ষকা নিজের পেশাগত পরিচয় আড়াল করে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে একটি এবং সরকারি চাকুরীজীবি হিসেবে আরও একটি পাসপোর্ট করেছে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষিকার নাম তাহেরা আক্তার, তিনি সিলেটের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বসিন্দা এবং রাছি নগর মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাপিঠের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন।
তাহেরার সহকর্মীদের অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকে ওই শিক্ষিকা নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকেন। এছাড়াও তিনি উন্নত জীবনের আশায় সরকারি চাকরির বিধিমালা অমান্য করে সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে বহির্গমনের পাসপোর্ট করেছেন এবং সরকারি চাকরিজীবি হিসেবে আরও একটি পাসপোর্ট তার সংরক্ষনে রয়েছে। তাছাড়া তিনি সরকারি বেতনভূক্ত সহকারী শিক্ষক পদে বহাল থেকে যথাযথ কতৃর্পক্ষের অনুমতি না নিয়ে নিয়মিত মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
তাহেরার এলাকার বাসিন্দা ও তার নিকট স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতিপূর্বে তাহেরার সাথে আমেরিকায় বসবাসরত বাঙালি এক প্রবাসীর সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রধরে ওই প্রবাসীর সাথে তিনি ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। একপর্যায়ে তাহেরা আমেরিকায় থিতু হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সেখানে যাওয়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে আইইএলটিএস সম্পন্ন করেন। যদিও ঘটনাক্রমে আমেরিকা প্রবাসী ওই যুবকের সাথে তার সম্পর্ক অবনতি হয়। তাদের এ সম্পর্কের বিষয়টি স্থানীয় জনমনে ছড়িয়ে পড়তেই তাহেরার পরিবারে তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর থেকেই তাহেরা বিভিন্নভাবে ইউরোপ ও আমেরিকায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রয়াস অব্যাহত রাখে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাহেরার স্বপ্ন পশ্চিমা বিশ্বে বসবাস করা। এজন্য তিনি সরকারি চাকুরিজীবি হিসেবে পরিচয় দিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেখে মেশিন—রিডেবল (এমআরপি) পাসপোর্ট করেন। যদি কারো মাধ্যম হয়ে সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থী কোঠায় যাওয়ার জন্য তিনি নিজেকের শিক্ষার্থী পরিচয়ে ডিজিটাল (ই) পাসপোর্ট করেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে তাহেরার এক সহকর্মী বলেন, তাহেরা বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে বহুল প্রতিক্ষিত সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি ভাগিয়ে নেন। তারা অনেকের মুখ থেকে শুনেছেন এ পদের জন্য অনৈতিকভাবে আর্থিক লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন তাহেরা। তাছাড়া তিনি প্রবাসী এক ব্যক্তির সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এ নিয়ে ইতিপূর্বে বহু আলোচনা—সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। তিনি (তাহেরা) আমেরিকায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছেন। যেকোন মূলে আমেরিকাসহ কিংবা কানাডায় থিতু হওয়ার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন তিনি। তার জন্য প্রস্তুত করেছেন একাধিক পাসপোর্ট।
বিষয়টি নিয়ে সহকারী শিক্ষিকা তাহেরা আক্তারের ০১৭……৪৫৮ নম্বরে যোগাযোগ করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তথ্য গোপন করে একাধিক পাসপোর্ট করার বিষয়ে জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সুনামগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের সরকারি নম্বর ০১৭৩৩—৩৯৩৩৯৬ এ একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগটি বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়।