ইউক্রেনের বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকারী নৌকায় রাশিয়ার হামলায় তিনজন প্রাণ হারিয়েছে। সেখানকার আঞ্চলিক গভর্নর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নোভা কাখোভকা বাঁধ ধসে পড়ার পর থেকেই দিনিপ্রো নদীর পানি বেড়ে সেখানে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে দিনিপ্রোর পূর্ব তীরে রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় লোকজনকে উদ্ধারে কাজ করছে ইউক্রেন। আঞ্চলিক গভর্নর ওলেকসান্দর প্রোকুদিন বলেন, রুশ সৈন্যরা একটি উদ্ধারকারী নৌকায় কামানের গোলা ছুড়েছে। সে সময় ৭৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হন।
ওই ব্যক্তি এক নারীকে গোলাগুলি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। আরও দুই পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার নোভা কাখোভকা বাঁধ উড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে বিশাল পানির প্রবাহ দ্রুত গতিতে দিনিপ্রো নদীর উভয় পাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবাহিত হয়। এতে নদীর তীরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকার ৪২ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যার পানিতে ৩০টি শহর ও গ্রাম ভেসে গেছে। এর মধ্যে ২০টি শহর ও গ্রাম ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, বাকি ১০টি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ইউক্রেনের ১৭ হাজার ও রাশিয়ার ২৫ হাজার মানুষের সাহায্য দরকার। তাছাড়া শহরটির দুই হাজার বাড়ি এরই মধ্যে পানিতে ডুবে গেছে।
ওই বাঁধ গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ইউক্রেন এবং রাশিয়া একে অন্যকে দোষারোপ করছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব হয়নি যে, আসলেই ওই হামলার পেছনে কারা দায়ী। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউজ সাইট পলিটিকোর সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট জেলেনিস্ক অভিযোগ করেন যে, বন্যা কবলিত এলাকায় লোকজনকে উদ্ধারের সময় ইউক্রেনীয় উদ্ধারকর্মীদের গুলি করেছে রুশ বাহিনী।
বন্যায় ইউক্রেনের বিপুল এলাকার কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে দেশটির কৃষিখাতে দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের মাঠগুলো আগামী বছরের শুরুর দিকেই ‘মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে’। কারণ কাখোভকা জলাধারের ওপর নির্ভরশীল সেচ ব্যবস্থাগুলো আর কাজ করছে না।
এদিকে ইউক্রেন দাবি করেছে যে, তারা বহুল প্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণের প্রথম জয় পেয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বের তিনটি গ্রাম মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ফুটেজে দেখা গেছে, ইউক্রেনীয় সেনারা দনেৎস্ক অঞ্চলের ব্লাহোদাৎনে এবং নেসকুচনে অঞ্চলে আনন্দ উদযাপন করছেন।
কিয়েভের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, কাছাকাছি মাকারিভকারও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। এর আগে শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিশ্চিত করেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে।