আইসিইউতে ইনফেকশন, অস্ত্রোপচার বন্ধ ১২ দিন!

আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) জীবাণুমুক্তকরণ এবং শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের ত্রুটির কারণে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার (কার্ডিয়াক সার্জারি) কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে।

জানা যায়, হাসপাতালটির অস্ত্রোপচার কার্যক্রম গত ১২ দিন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

নির্দিষ্ট সময় পরপর আইসিইউ জীবাণুমুক্ত করতে হয়। তা না হলে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়। ঈদের সময় নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে না পারায় এমনটি হয়েছে। এছাড়া এসির যান্ত্রিক ত্রুটিও দেখা দিয়েছে। যে কারণে গত ১৭ এপ্রিলের পর আর কোনো অস্ত্রোপচার হয়নি— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক এ প্রসঙ্গে বলেন, হাসপাতালের সার্জারি ও আইসিইউ বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসি নষ্ট থাকায় ওটা দিয়ে পানি পড়ছিল। এর মাধ্যমে আইসিইউতে ইনফেকশন ছড়াচ্ছিল।

‘সম্প্রতি আইসিইউতে ইনফেকশন রেট হাই হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমরা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলাম। কিন্তু গত কিছুদিন ইনফেকশনের কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচারসহ আইসিইউ বন্ধ রেখেছে।’

অস্ত্রোপচার বন্ধে যন্ত্রপাতির সংকটও দায়ী— উল্লেখ করে আরেক চিকিৎসক বলেন, এলসি সংকটের কারণে আমরা কোনো যন্ত্রপাতি আনতে পারছি না। বারবার ব্যাংকে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সমাধান দিচ্ছে না। উল্টো আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা যন্ত্রপাতি পেলে কাজ শুরু করতে পারব।

যন্ত্রপাতির মজুত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের স্টকে কোনো মালামাল মজুত নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। অক্সিজেনের সংকট অনেক আগে থেকেই ছিল। ভাল্ব ছিল না অনেক দিন। মাঝখানে কিছু আসলেও দ্রুত তা শেষ হয়ে যায়।’

এ বিষয়ে হাসপাতালটির কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মনজুরুল আলম বলেন, ‘আইসিইউ জীবাণুমুক্তকরণ ও এসির যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে, আশা করছি আগামী দু-একদিনের মধ্যে সার্জারি শুরু হয়ে যাবে।’

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সম্প্রতি মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে এসিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল ঈদের ছুটিতে এগুলো ঠিকঠাক করা হবে। কিন্তু সেটা করা যায়নি। এসির সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে সার্জারি ও আইসিইউ চালু হয়ে যাবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে সর্বমোট শয্যা আছে এক হাজার ২৫০টি। দৈনিক গড়ে দেড় হাজার রোগী ভর্তি থাকেন এখানে।

হাসপাতালটির কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিটে দৈনিক গড়ে রোগীর অস্ত্রোপচার হয় সাত থেকে আটজনের। এদিকে, গত ১২ দিন ধরে অস্ত্রোপচার বন্ধ। অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকায় ৪০ শয্যার আইসিইউও বন্ধ। তবে, হাসপাতালটির আট থেকে ১০ শয্যার আইসিইউ চালু আছে। 

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন