ঢাকা-১৭ আসনের উপ নির্বচানের ভোট চলাকালে সংসদ সদস্য প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ৭ জন সন্দেহভাজন হামলাকরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ দেখে ওই ৭ জনকে শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এর আগে সুজন রহমান শুভ নামে হিরো আলমের ব্যক্তিগত এক সহকারী বাদী হয়ে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পরিকল্পিতভাবে হিরো আলমের পথরোধ করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে আহত করেছে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, গোপালগঞ্জ জেলার মোকসুদপুর গোয়ালা গ্রামের আ. গফুরের ছেলে বিপ্লব হোসেন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি গোয়াপগ্রামের রেজাউল কাজীর ছেলে ছানোয়ার কাজী, গোপালগঞ্জ মোকসুদপুর বর্ণী গ্রামের মো. মিরাজ সিকদারের ছেলে মাহমুদুল হাসান মেহেদী, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাগাইল গ্রামের সাফায়াত খানের ছেলে মোজাহিদ খান, কুমিল্লা জেলার হোমনা পাতালিয়াকান্দি গ্রামের রফিক সরকারের ছেলে মো. আশিক সরকার, শরীয়তপুর জাজিরা বিলাশপুর গ্রামের মো. আবুল কাশেম শেখের ছেলে মো. হৃদয় শেখ, গোপালগঞ্জ কাশিয়ানি দেবাসুর গ্রামের মো. শহিদুল মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা। এদের মধ্যে বিপ্লব বর্তমানে পল্লবী থানার অন্তর্গত মিরপুর ১১ এর বাউনিয়াবাদ এলাকায় থাকেন, ছানোয়ার কাজী বনানী মহাখালী ওয়ারলেছ গেইট এলাকায়, মাহমুদুল হাসান মেহেদী বনানী ১/এ জিপি-চ এর বাসিন্দা, মোজাহিদ খান তেজগাঁও পূর্ব নাখালপাড়ায় থাকেন। মো. আশিক সরকার থাকনে বনানীর কড়াইল মোশারফ বাজার আবুল কাসেন মিয়ার বাড়ীতে এবং সোহেল মোল্লা থাকে ঢাকা খিলক্ষেত মধ্যপাড়া এলাকায়।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সন্দেহভাজন ৭ হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ছনোয়ার কাজী ও বিপ্লব হোসনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে আদালতে।
এর আগে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ৭ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সারা দিন শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের একেবারে শেষ পর্যায়ে বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা ঘটে। ৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি কিছু নাম পেয়েছি, তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
তিনি আরো বরেন, জড়িতরা যে রাজনৈতিক দলের হোক নাকে, ছাড় দেওয়া হবে না। ‘আমরা তদন্ত করে দেখছি। এক দলের ব্যাজ ধারণ করা লোকজনের মধ্যে তৃতীয় কোন পক্ষ ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা করছি’। পুলিশ হিরো আলমের অফিসে গেছে জানিয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, তাঁকে অনুরোধ করা হয়েছে মামলা করার জন্য।
ঢাকার গুলশান, বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোট হয়েছে গতকাল (১৭ জুলাই)। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত (মোহাম্মদ এ আরাফাত)। তিনি এ আসনে বিজয়ী হয়েছেন। এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে কোনো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল না।
অন্য প্রার্থীদের মধ্যে বগুড়ার ছেলে আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমই পরিচিত ছিলেন। মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করে সারা দেশে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা হিরো আলম গত ফেব্রæয়ারিতে অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনেও প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন। সেখানে মহাজোটের প্রার্থী জাসদ নেতা এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি।
গতকাল ঢাকা-১৭ আসনের ভোট গ্রহণ চলাকালে বেলা সোয়া তিনটার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে যান হিরো আলম। এ সময় নৌকা প্রতীকের কর্মী ও সমর্থকেরা পেছন থেকে তাঁর উদ্দেশে গালাগাল করতে থাকেন এবং কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে রেখে স্কুলের ফটকের দিকে নিয়ে যান।
ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে ধাওয়া দিয়ে বাইরে আনার পরে রাস্তায় ফেলে ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমকে পেটান নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা।