নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনে গুলি ছুড়ে এসআই আজাদ এখনও বহাল

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল কালাম আজাদকে ঘিরে নানা বিতর্ক থাকলেও পুলিশের এ সদস্য এখনো তার স্বপদে বহাল রয়েছে। স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করতে আবুল কালাম আজাদ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। গত ২০ জুলাই ছাত্র—জনতার তমুল আন্দোলন চলাকালে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় প্রিতম টাওয়ারের সামনে ছাত্র—জনতার উপর পুলিশের এই সদস্য মুহুর্মুহু গুলি বর্ষণ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করেছেন এমন অভযোগে কেরছেন অনেকেই।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র—জনতার লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশ ত্যাগের পর বাংলাদেশ পুলিশে ব্যাপক রদবদল শুরু হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা কর্মরত অসংখ্য পুলিশ সদস্যদের প্রথমে জেলার বিভিন্ন ইউনিটে এবং পরবর্তীতে জেলার বাহিরে বদলী করা হলেও অলৌকিক শক্তি বলে এসআই আবুল কালাম এখনো গোয়েন্দা শাখার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের স্বপদেই বহাল আছেন।

একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, গত ৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের স্মারক নং—৫৪১২/১(৪৫)/আরও) মূলে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ১শ ৫০ জন উপরিদর্শককে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে জেলার অন্য ইউনিটে বদলী করা হয়েছে। এ তালিকার ৬১ নম্বর ক্রমিকে উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম (বিপি—৭৫৯৩০১৭৩৪২) কে ডিবি রূপগঞ্জ জোন থেকে বন্দর থানায় বদলী করা হয়। জেলা পুলিশের এমন আদেশ জারি হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা নতুন ইউনিটে বদলী হয়ে পুলিশিং কর্মকান্ড শুরু করলেও অজ্ঞাত কারণে এসআই মো. আবুল কালাম আজাদ এখনো তার পূর্বের স্থানেই বহলা রয়েছে।

সূত্রমতে, জেলা পুলিশর এক শীর্ষ কর্মকর্তার তদবীরের করে আবুল কলামের বদলী ঠিকিয়ে দিয়েছেন। যদিও আবুল কালাম আজাদ একজন বিএনপি নিধনকারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বহুল পরিচিত।

নারায়ণগঞ্জ ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে দেওয়া সাধারণ ছাত্রদের অভিযোগ এক দফা এক দাবী নিয়ে যখন তারা নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় কঠোর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছিলেন তখন নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের পূর্বের সদস্যরা তৎসময়ের কতিপয় দলবাজ কর্মকর্তাদের নির্দেশে বল প্রয়োগ করেছিল, এমনকি মরনাস্ত্র দিয়ে অসংখ্য ছাত্র—জনতাকে হত্যা ও চিরতরে পুঙ্গ করে দিয়েছে। তাদেরই একজন এসআই আবুল কালাম আজাদ।

এ দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় কর্মরত বর্তমান অনেক পুলিশ সদস্য এবং সাবেক সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসআই আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুরের বাসিন্দা। তিনি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদানের পর শুধু মাত্র নারায়ণগঞ্জ জেলাতেই কমবেশি ১৫ বছর সার্ভিস করেছেন। তার কর্মস্থলের মধ্যে রয়েছে ফতুল্লা মডেল থানা, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, জেলা গোয়েন্দা শাখা ও আড়াইহাজার থানা। পুলিশের এই সদস্য নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা শাখায় যোগদানের আগে রূপগঞ্জ থানায় এসআই হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। পরে বিভিন্ন তদবীর কেরে তিনি নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা শাখা সিটিইউ এ যোগদান করেন।

এর আগে বিগত ২০১৮-১৯ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জ ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করার একাধিক অভিযোগ নিয়ে বহু সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল। যদিও তিনি বরাবরই এ ধরণের অভিযোগগুলো অস্বীর করেছেন।

অপর দিকে একটি সূত্রের তথ্যমতে জানা গেছে, এসআই আবুল কালাম আজদ ফরিদপুরের বাসিন্দা হলেও তিনি দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ পুলিশে কর্মরত থাকার সুবাধে রূপগঞ্জে উপজেলা ব্যয়বহুল বাড়ি নির্মাণ করে স্বপরিবারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করছেন। এখানে থেকেই তিনি তার এক ছেলেকে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরীতে যোগদানে সহযোগীতা করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন