মায়ের গর্ভে শিশুর মাথা জন্মনালীর দিকে থাকলে তা প্রসবের জন্য স্বাভাবিক ও নিরাপদ অবস্থা। একে ডাউন হেড পজিশন বলে। কিন্তু শিশু যদি গর্ভে উল্টোভাবে থাকে, তাহলে এই অবস্থাকে বলে ব্রিচ পজিশন।
গর্ভকালে শিশু ওই অবস্থানে থাকলে সাধারণত সি-সেকশন বা অস্ত্রপোচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে কিছু জটিল পরিস্থিতি বাদ দিলে অনেক ক্ষেত্রেই পেটের উপর মালিশ করে গর্ভের শিশুকে সঠিক অবস্থানে আনা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন প্রশিক্ষিত নার্স শারমিন বন্যা। তিনি বলেন, “বিশেষ করে আগেকার দিনে ধাত্রীরা এই মালিশে পারদর্শী ছিলেন।
“যেহেতু এখন ডাক্তারমুখী হয়ে গেছি আমরা, তাই ধাত্রীরা এই পদ্ধতি চর্চা করারও সুযোগ পান না। মালিশটা যে করা যায়, সেটি আমরা ভুলে যাচ্ছি। গ্রামে যারা চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছেন না, সেখানে হয়ত পুরনো দাই থাকলে তারা এই মালিশ করে দেন।”
এই পদ্ধতির অন্য নাম এক্সটার্নাল সিফালিক ভার্সন (ইসিভি)। গর্ভে ভ্রুণের ৩২ সপ্তাহ, মানে ৮ মাস পরেও যদি গর্ভের শিশুর অবস্থান সঠিক না থাকে, তাহলে ৩২ থেকে ৩৪ সপ্তাহের মধ্যে এই মালিশ করা যায়।
প্রস্তুতি হিসেবে গর্ভবতী মা আগের দিন থেকে নরম খাবার খাবেন। যেন তার বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগ হয়ে যায়।
“মাকে বিছানায় শুইয়ে তাকে সহজ করে নিতে হয়। এই মালিশে কোনো অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োজন হয় না। যদি কর্ড অ্যারাউন্ড নেক মানে গলায় নাড়ি প্যাঁচানো না থাকে, তাহলে এই মালিশ একটি সহজ পদ্ধতি।”
পেটের উপর তেল বা লুব্রিকেন্ট দিয়ে ধীরে ধীরে মালিশ করা হয়। গর্ভের শিশুর পিঠ ও মাথার অবস্থান শনাক্ত করে হাতের মৃদু চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে ঘোরাতে হয়, যেন মাথা প্রসব পথের দিকে এবং পা উপরের দিকে আসে।
মালিশের সময় গর্ভবতী কোনো ব্যথা অনুভব করেন না, তবে পেটে শিশুর নড়াচড়ার কারণে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন।
তবে ৩৪ সপ্তাহের পরে বাচ্চার মাথা ঘোরানো বেশ কঠিন হয়ে যায় বলে জানালেন শারমিন বন্যা। এ সময় মালিশ ’কয়েক সিটিং দিয়ে’ করা দরকার হতে পারে।
একবার সন্তান প্রসব করেছেন এমন কেউ পুনরায় গর্ভধারণ করলে ভ্রুণের ৩৪ সপ্তাহের পরেও এই মালিশ করা যায়।
শারমিন বন্যা বলেন, এই মালিশের ফলে সি-সেকশন এড়িয়ে স্বাভাবিক প্রসব সহজ হয়ে ওঠে।
দক্ষ ও অভিজ্ঞ ধাত্রীরা গর্ভবতীর পেটে হাত দিয়ে শিশুর মাথার অবস্থান বুঝতে পারেন। এছাড়া গর্ভের শিশুর অবস্থান নিশ্চিত হতে আলট্রাসনোগ্রাম করা যায়।
গর্ভবতী ও তার পেটের শিশুর অন্য শারীরিক জটিলতা রয়েছে কিনা জানতে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম