বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বিশ্বের বনগুলোতে যত বাঘ আছে, তার ৭০ শতাংশের আবাস ভারতে। ভারতে এখন বাঘের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৭টি, যা চার বছর আগের তুলনায় ২০০ বেশি। দেশটির নতুন বাঘ শুমারিতে উঠে এসেছে এই তথ্য।
বিবিসি জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রোববার বাঘ শুমারির এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ‘প্রজেক্ট টাইগার ক্যাম্পেইন’ এর সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই জরিপ চালানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, তার দেশ শুধু বাঘদের সুরক্ষাই দিচ্ছে না, বরং তাদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ‘একটি চমৎকার বাস্তুসংস্থানও’ গড়ে তুলেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসায় ১৯৭৩ সালে ভারতে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে প্রজেক্ট টাইগার কর্মসূচি শুরু হয়।
একটি হিসাব অনুযায়ী, ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকার সময় শুধু ১৮৭৫ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যেই ভারতে প্রায় ৮০ হাজার বাঘ হত্যা করা হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে বাঘ শিকারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভারতে অনেক ক্ষেত্রেই ইংরেজ শাসক ও তাদের সহযোগী জমিদাররা প্রমোদের অংশ হিসেবে বাঘ হত্যা করতে থাকেন এবং ১৯৬০ সাল নাগাদ ভারত থেকে বাঘ নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়।
ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত হয়ে স্বাধীন ভারত সরকার তাদের জাতীয় প্রাণী বাঘ সংরক্ষণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে শুরু করে, যার মধ্যে বাঘ শিকার নিষিদ্ধ করা এবং গ্রামে গ্রামে এ বিষয়ে প্রচারাভিযান উল্লেখযোগ্য।
বন্যপ্রাণী হত্যা বা আটক করাও প্রায় বেআইনি ঘোষণা করা হয় এবং এসব বিষয়ে কড়া আইন প্রণয়ন করা হয়। এর ফলাফল হিসেবে ভারতে ২০০৬ থেকে বাঘের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।
২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের উত্তরে ও মধ্যাঞ্চলে শিবালিক পার্বত্য এলাকা ও গাঙ্গেয় বন্যাপ্রবণ সমতল অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, বিশেষ করে মধ্য প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে।
তবে ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের পর্বত শ্রেণিতে আবার বাঘের সংখ্যা কমেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু কিছু অংশে স্থানীয় বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং ঝাড়খণ্ড ও অন্ধ্র প্রদেশের মত রাজ্যগুলোতে বাঘের অস্তিত্ব টেকাতে ‘আরও জরুরিভাবে সংরক্ষণ কার্যক্রম’ পরিচালনা করা দরকার।
বড় ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্পকে বাঘের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকৃতি ও উন্নয়নের ভারসাম্য বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া বেআইনি বন্যপ্রাণি বাণিজ্য ও বাঘের আবাসস্থলের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কথাও প্রতিবেদনে এসেছে।
বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০১৮ সালের শুমারিতে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল, ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০৬টি, ২০০৪ সালের জরিপে পাওয়া গিয়েছিল ৪০৪টি বাঘ।
গতবছর ডিসেম্বরে আবারও সুন্দরবনের বাঘ গণনা শুরু হয়েছে, যার ফলাফল জানা যাবে ২০২৪ সালে।