দেশের জন্য একসাথে কাজ করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী

‘স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প’ অর্জনে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসহ সকলকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই।

এ লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতের অংশীজনদের নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এক্সেলারেটিং ব্লেন্ডেড এডুকেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক কনসালটেশনের আয়োজন করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই এর সহযোগিতায় আয়োজিত এই ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।

২০২২ সালে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সাধারণ সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল ব্লেন্ডেড এডুকেশনাল মাস্টার প্ল্যান (২০২২-২০৩১) তুলে ধরেন এবং সেখানে বাংলাদেশে একটি এডুকেশন এক্সিলারেটর গঠনের কথা ঘোষণা করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগে এবং বিভিন্ন বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে একটি এক্সিলারেটর গঠন করা হয়। এডুকেশন এক্সিলারেটর এর চারজন কো-চেয়ার হলেন: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপার্সন রুবানা হক।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। অনুষ্ঠানের মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড তানিয়া মিলবার্গ এবং এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী। এ সময় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ওস্তাপ লুতসিশিন, এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্লেন্ডেড শিক্ষা উপযোগী করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ও প্রয়োজনীয়তার ওপরে একটি প্যানেল আলোচনা হয়। প্যানেলিস্ট হিসেবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড তানিয়া মিলবার্গ। প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. একিউএম শফিউল আজম।

বিগত এক দশকে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের শিক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকহারে প্রসারিত হয়। কোভিড সময়ে পুরো বিশ্বের ন্যায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও তা মোকাবিলায় দেশের যথেষ্ট ছিল। এ সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয়ভাবে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ রেডিও ও অনলাইনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা হয়। কোভিড পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন-অফলাইন মিশ্রণে ব্লেন্ডেড শিক্ষার পদ্ধতির নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণলায়ের নেতৃত্বে মোট ১৩টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে ব্লেন্ডেড শিক্ষা ও দক্ষতা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে।

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা মোকাবিলায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরের উপযোগী করে তোলার জন্য সচেতনতা তৈরি করা এই কন্সালটেশনের অন্যতম লক্ষ্য। ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতিকে উন্নতকরণের মধ্য দিয়ে দেশে প্রযুক্তিনির্ভর, সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করে ভবিষ্যতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব।

ব্লেন্ডেড শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, একবিংশ শতাব্দীতে শুধু গতানুগতিক পড়াশোনা দিয়ে শিক্ষার নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। নতুন সময়ে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্লেন্ডেড করা এই পরিবর্তনের একটি অংশ কিন্তু এই পরিবর্তনের যাত্রায় সবাইকে একত্রে কাজ করা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথ সুগম করা উদ্দেশ্য আমাদের। সেজন্য সবাইকে এই মিশন-ভিশনকে বিশ্বাস করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন