গত মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৯.৩৩ শতাংশ

মার্চ মাসে দেশে সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ( বিবিএস) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মার্চে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে যা ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ ছিল । মার্চের মূল্যস্ফীতি গত ৭ মাসের মধ্যে সর্বাধিক।

গত বছরের আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে, যা চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শুধু তাই নয়, এর আগে অন্তত এক যুগে কোনো মাসে আগস্টের মতো বেশি হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভাশেষে মার্চের মূল্যস্ফীতির এই তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রোজার কারণে মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি ‘আরেকটু’ বাড়তে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি আগের মাসের চেয়ে মার্চে বেড়েছে। উদ্বেগ ছিল, ১০ শতাংশে পৌঁছায় কি না। কিন্তু তা হয়নি। তবে এর মাঝে সুখবর হলো, মজুরি বৃদ্ধির হারও কিছুটা বেড়েছে। মার্চে এক বছর আগের তুলনায় মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। মজুরি বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে সামান্য হলেও সহায়ক হবে।

মার্চের মূল্যস্ফীতি সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ছিল চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। যা ছিল গত এক যুগের মধ্যেও সর্বোচ্চ।

২০১০-১১ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এরপর ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই সূচক ৯ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। সেই হিসাবে মার্চের মূল্যস্ফীতি ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার প্রবণতা ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এ রকম এক সময়ে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এই দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠে যায়।

যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবরে তা আরও কমে ৯ শতাংশের নিচে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয় ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা কমে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশে নেমে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে।

তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকার কারণে বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে হলো ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে : বিবিএসের তথ্যমতে, মার্চে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ডিসেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। অক্টোবরে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমেছে: অন্যদিকে মার্চে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। জানুয়ারিতে তা ছিল ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। নভেম্বরে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অক্টোবরে ছিল ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

মজুরি সূচক বেড়েছে: বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয় ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সর্বশেষ জানুয়ারিতে তা আরও খানিকটা বেড়ে ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে ওঠে। ফেব্রুয়ারি মাসে হয় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। সর্বশেষ মার্চ মাসে মজুরি সূচক বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন